লন্ডন ছেড়ে কোটিপতিরা পাড়ি জমাচ্ছেন এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে

এক সময় টেমস নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী লন্ডন শহর ছিল ধনী ও অভিজাত পরিবারের স্বপ্নের ঠিকানা। স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই শহর বিশ্ববাসীর নজর কাড়ত দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস আর ৯০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস নিয়ে লন্ডন ছিল গর্বের প্রতীক। কিন্তু সময় বদলেছে, আর সেই সঙ্গে বদলেছে ধনীদের পছন্দের তালিকাও।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ধনী শহরের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে লন্ডন। গত এক দশকে শহরটি তার ১২ শতাংশ ধনী বাসিন্দাকে হারিয়েছে, যা অভূতপূর্ব এক ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্রিটিশ বিনিয়োগ অভিবাসন পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ‘হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স’-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১১ হাজারেরও বেশি কোটিপতি লন্ডন ছেড়েছেন। এই ধনীরা কেবল শখের বশে শহর ছাড়ছেন না, বরং করের বোঝা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্রেক্সিটের প্রভাব তাদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করেছে।

লন্ডনের বিত্তবানদের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে এশিয়া এবং আমেরিকার শহরগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো, সিলিকন ভ্যালি ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এবং এশিয়ার সিঙ্গাপুর শহর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত এক বছরে লন্ডনের কোটিপতির সংখ্যা ২ লাখ ২৭ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭০০-এ।

‘হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স’ এবং ‘নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ’-এর যৌথ প্রতিবেদন বলছে, ধনীদের পছন্দের শহরের তালিকায় এখন লস অ্যাঞ্জেলেস লন্ডনের স্থান দখল করেছে। ২০২৫ সালের প্রাক্কালে লন্ডন এখন ষষ্ঠ অবস্থানে চলে গেছে।

তালিকার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে—

১. নিউইয়র্ক সিটি
২. সান ফ্রান্সিসকো ও উপকূলবর্তী অঞ্চল
৩. টোকিও
৪. সিঙ্গাপুর
৫. লস অ্যাঞ্জেলেস

এ ছাড়া শীর্ষ দশে আছে প্যারিস, হংকং, সিডনি ও শিকাগো। এসব শহরের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া, যেখানে গত ১০ বছরে কোটিপতির সংখ্যা ৯৮ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে সিঙ্গাপুরে এই সংখ্যা বেড়েছে ৬২ শতাংশ।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা এখন বাস করছেন মূলত আমেরিকায়। প্রযুক্তি শিল্পের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ধনবৃদ্ধি হচ্ছে। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মতো বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররাও এই ধনকুবের তালিকায় আছেন। বিশ্বজুড়ে মোট ২,১৫৮ জন ধনকুবেরের মধ্যে ৫৮৫ জনই যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু লন্ডনের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির একটি নতুন রূপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দিনে ধনীদের অভিবাসন প্রবণতা আরও বাড়তে পারে এবং তার প্রভাব পড়বে শহরগুলোর অর্থনীতি ও নীতিনির্ধারণে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply