জীবনের পথে চলতে গিয়ে আমাদের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে নানা ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সব সম্পর্কই যে সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে, তা নয়। কারও কাছে আপনি প্রিয় হয়ে উঠতে পারেন, আবার কারও কাছে হয়ে উঠতে পারেন অপছন্দের। যদিও সবসময় সবার মন জুগিয়ে চলা সম্ভব নয়, তবু কিছু সাধারণ আচরণ বা অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে অপছন্দের পাত্র হয়ে উঠার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
বদমেজাজ: সম্পর্ক নষ্টের অন্যতম কারণ
বদমেজাজ শুধু একজন ব্যক্তিকেই নয়, তার আশপাশের মানুষদেরও অস্বস্তিতে ফেলে। এই স্বভাবের কারণে দাম্পত্য জীবনেও তৈরি হয় দূরত্ব, ভালোবাসা হারিয়ে যায়, বাড়ে কলহ ও ঝগড়া। তাই নিজেকে শান্ত ও ধৈর্যশীল রাখা সম্পর্ক রক্ষায় অত্যন্ত জরুরি।
কথার মাঝে ফোড়ন কাটা: বিরক্তির বড় উৎস
অনেকেই অন্যের কথার মাঝখানে বারবার মন্তব্য করে ফেলেন বা গল্প থামিয়ে নিজেদের বক্তব্য জুড়ে দেন। অথচ সামনের মানুষটি মনোযোগ চায়, তার অনুভূতি ভাগাভাগি করতে চায়। তাই মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা এবং উপযুক্ত সময়েই মতামত দেওয়া সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অংশ।
অতিরিক্ত ভালো হওয়াও হতে পারে সমস্যার
শোনার মধ্যে অদ্ভুত মনে হলেও, অতিরিক্ত ভালো মানুষরাও অনেক সময় অন্যদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেন। কারণ, এদের সামনে অনেকে নিজেকে তুচ্ছ মনে করেন বা ভাবেন এমন মানুষ আসলে ভণ্ড। ফলে, সেই ভালো মানুষটি একসময় একা হয়ে পড়েন।
ব্যক্তিগত বিষয় হুট করে শেয়ার করা
পরিচয়ের শুরুতেই নিজের জীবনের গভীর বা একান্ত বিষয়গুলো বলে দেওয়া অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর লাগে। এমন আচরণ দুর্বল ব্যক্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় এবং অনেকেই একে নেতিবাচকভাবে নেন। তাই সম্পর্ক গভীর না হলে ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখাই শ্রেয়।
অতিরিক্ত দেখানোর চেষ্টা
‘আমি এটা করেছি, ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে’—এমন কথাবার্তা অনেকেই অপছন্দ করেন। নিজেকে প্রমাণের অতিরিক্ত চেষ্টা অনেক সময়ই নিজেই নিজেকে ছোট করে তোলে। নিজের গুণাবলি ও সাফল্য নিয়ে অহংকার না করে সহজভাবে উপস্থাপন করাই শ্রেয়।
আবেগ লুকিয়ে ফেলা: সম্পর্কের দেয়াল
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হলেও, আবেগ লুকিয়ে ফেলা নয়। আবেগ লুকানোর প্রবণতা আপনাকে একাকিত্বে ঠেলে দিতে পারে। সম্পর্ককে মজবুত করতে হলে আবেগের প্রকাশও জরুরি।
পরচর্চা: সবচেয়ে ঘৃণিত অভ্যাস
কারও সামনে ভালো, আর পেছনে খারাপ বলা—এমন আচরণ সামাজিকভাবে খুবই নেতিবাচক। এটি মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয় এবং আপনাকে সহজেই অপছন্দের তালিকায় ফেলে দেয়। তাই দ্বিমত থাকলেও তা সম্মানজনকভাবে প্রকাশ করাই উত্তম।
সম্পর্কের মূল চাবিকাঠি: আন্তরিকতা
শেষ কথা হলো, কাউকে পছন্দ করাতে হলে আগে আপনাকে আন্তরিকভাবে তাকে পছন্দ করতে হবে। অপছন্দের বিনিময়ে পাওয়া যায় অপছন্দই। তাই নিজেকে ইতিবাচক ও আন্তরিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুললেই, সম্পর্কগুলো হয়ে উঠবে আরও দৃঢ় ও প্রিয়।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ