বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণদাতা দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ বাড়তি সময় পেয়েছে। ২০২৭ সালের মার্চ থেকে প্রকল্পের ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ শুরু করার কথা ছিল, তবে বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। রাশিয়া তাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে পরিশোধের সময়সীমা দেড় বছর বাড়িয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধের প্রথম সময় ছিল ২০২৭ সালের মার্চ। তবে সরকারের অনুরোধে রাশিয়া ২০২৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পরিশোধ শুরু করার নতুন সময় নির্ধারণ করেছে। প্রকল্পের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, তাই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। রাশিয়া এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে এবং প্রকল্পের জন্য নেওয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধেও ছাড় দিয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ব্যয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা) ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া সরকার এবং বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব জোগান। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ৭ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে। অতিমারি করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঋণের অর্থছাড়ে দেরি হয়েছে, তবে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।
রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় রাশিয়া একটি জরিমানা আরোপ করেছিল। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়ায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জরিমানা হয়েছিল, যা রাশিয়া মওকুফ করেছে। যদিও রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি, তবুও রাশিয়া এই জরিমানা মওকুফ করেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শুরু হয় এবং আগামী ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন। প্রকল্পের কাজ এখনও কিছুটা বাকি থাকায়, ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ইউরোপ উইংয়ের প্রধান ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ভিত্তিতে এই ভালো সিদ্ধান্ত এসেছে। প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি, তবে আরও দুই বছর সময় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে এবং রাশিয়া এতে সম্মতি জানিয়েছে।” তিনি আরও জানান, সম্ভবত ঋণের কিস্তির অর্থ আলাদা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারে তা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বিকল্প প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে এখনও কোনো সমাধানে আসা সম্ভব হয়নি।
তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ